গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর ‘মিরাকল’ কন্যা শিশুর মা হলেন এক ব্রিটিশ নারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের বদান্যতায়, আর ভালোবাসার অনন্য নজির হিসেবে গর্ভ তিনি পেয়েছেন নিজেরই বোনের কাছ থেকে।'মা'। এক অক্ষরের ছোট্ট শব্দেই লুকোনো গোটা এক জীবনের সকল ভালোবাসা, অকৃত্রিম দরদ, স্নেহ, মায়া, মমতা। দীর্ঘ আর কঠিন পথ পার করে তবে মধুর এ ডাক শোনার সৌভাগ্য হয় নারীদের।
বোনের কাছ থেকে নেয়া গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর মা হলেন এক ব্রিটিশ নারী। যুক্তরাজ্যে গর্ভ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের ঘটনা এটাই প্রথম। লন্ডনের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী গ্রেস ডেভিডসন জন্মেছিলেন অপুষ্ট জরায়ুর ত্রুটি নিয়ে, যদিও তার ডিম্বাশয় ছিল স্বাভাবিক। প্রতি পাঁচ হাজার নারীর একজন বিরল এ ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম মেয়ার-রকিটান্সকি-কুস্টার-হওসার সিন্ড্রোম বা সংক্ষেপে এম.আর.কে.এইচ।
গর্ভ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া নারী গ্রেস ডেভিডসন বলেন, ‘সবসময় মনে হতো জীবন অসম্পূর্ণ আমার। হতাশ ছিলাম। খুব একটা আনন্দময় জীবন ছিল না। সবসময় দুঃখের ছায়া ঘিরে থাকতো আমাকে। সে ছায়া সরে গেছে। বাচ্চাটা আসার পর যতোটা সুখী আমি, তার তুলনা হয় না।’শুরুতে গ্রেসের মা নিজের জরায়ু মেয়েকে দেবেন বলে কথা হলেও গ্রেসের দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলে পরে এগিয়ে আসেন বোন। গ্রেসকে নিজের গর্ভ দিয়েছেন যে বোন, ১০ ও ছয় বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তানের মা তিনি।আর কোনো সন্তান নেবেন না বলে মা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত বোনের সাহায্যে হাত বাড়ান। বর্তমানে পাঁচ সপ্তাহ বয়সী 'মিরাকল' কন্যা শিশুটির নাম 'এমি ইসাবেল' রাখা হয়েছে গর্ভদাতার নামেই।গর্ভদাতা ও গ্রেস ডেভিডসনের বোন এমি পার্ডি বলেন, ‘আমার পরিবার পূর্ণ হয়েছিল। তাই বোনের জন্য কিছু করতে পারবো কি না, সে প্রশ্ন পর্যন্তই যাইনি। বোনের জন্য এটা করতেই হতো।’
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারে এমির গর্ভ গ্রেসের দেহে প্রতিস্থাপনে সফল হন ৩০ জনের বেশি চিকিৎসকের একটি দল। এর দুই বছর পর গেলো ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীর আলো দেখে সন্তান। শিশুটি সুস্থভাবে জন্ম নেয়ায় প্রতিস্থাপিত গর্ভের মাধ্যমে এবার আরও এক সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা গ্রেস-এমি দম্পতির।প্রতিস্থাপিত গর্ভে জন্ম নেয়া এমির বাবা অ্যাঙ্গাস বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি দিন মেয়ের দিকে তাকাবো আর তাকে পৃথিবীতে আনতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন যিনি, তাকে স্মরণ করবো। এমিকে ছাড়া আমাদের পরিবার পূর্ণ হতো না।’
গ্রেস-এমি'র অস্ত্রোপচার করা বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গ্রেসের পরে আরও তিনটি গর্ভ প্রতিস্থাপন করেছেন তারা; তিনটি গর্ভই নেয়া হয় মৃত নারীর শরীর থেকে।ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে মোট ১৫টি গর্ভ প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা আছে তাদের। প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড খরচে এ প্রক্রিয়ায় আগ্রহ জানিয়েছেন আরও হাজারও নারী। উম্ব ট্রান্সপ্লান্ট ইউকে'র অর্থ সহায়তায় হয় এসব অস্ত্রোপচার।গর্ভ প্রতিস্থাপক দলের প্রধান ইসাবেল কুইরোগা বলেন, ‘এটা জীবন বাঁচানোর মতো মহান কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু জীবনকে বদলে দেয়া, জীবন সমৃদ্ধ করা এবং নতুন জীবন তৈরির একটি প্রক্রিয়া। এমন অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা নেই।’
সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ' নারীর দেহে গর্ভ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, ভারতসহ ১২টির বেশি দেশে গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর সন্তান জন্ম দিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ নারী। বিশ্বের প্রথম সফল গর্ভ প্রতিস্থাপন হয় সুইডেনে ২০১৪ সালে, এক বছর পরই সুস্থ সন্তান জন্ম দেন সেই নারীও।